ইসলাম ধর্মে জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিন অত্যন্ত মর্যাদাসম্পন্ন ও ফজিলতপূর্ণ। কোরআন ও হাদিসে এই দশ দিনের আমলের গুরুত্ব বিশেষভাবে বর্ণিত হয়েছে। মুসলিম উম্মাহর জন্য এটি আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের এক অপূর্ব সুযোগ।
পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে:
وَٱلْفَجْرِ وَلَيَالٍ عَشْرٍ
অর্থ: “শপথ ফজরের এবং শপথ দশ রাতের।”
(সূরা আল-ফজর, আয়াত: ১-২)
তাফসিরকারীরা বলেন, এখানে ‘দশ রাত’ বলতে জিলহজের প্রথম দশ রাতকে বোঝানো হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায়, এ দশ রাত আল্লাহর কাছে অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।
হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
ما من أيامٍ أفضلُ عندَ اللهِ من أَيَّامِ عَشْرِ ذِي الحجَّ
অর্থ: “আল্লাহর কাছে জিলহজের প্রথম দশ দিনের চেয়ে উত্তম কোনো দিন নেই।”
(ইবনে হিব্বান, হাদিস: ৩০২)
অন্য এক হাদিসে এসেছে:
أَفْضَلُ أَيَّامِ الدُّنْيَا الْعَشْرُ، يَعْنِي عَشْرَ ذِي الْحِجَّةِ
অর্থ: “পৃথিবীর দিনসমূহের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম দিন হচ্ছে জিলহজের প্রথম দশ দিন।”
(তারতিবুল আমালি, হাদিস: ১৬৮৭)
ফজিলতপূর্ণ আমলসমূহ:
এই সময়কালে বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগি, তসবিহ-তাহমিদ ও তাকবির পড়ার গুরুত্ব হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।
হাদিস:
ما من أيامٍ أعظمُ عندَ اللهِ ولا أحبُّ إليه العملُ فيهنَّ من هذه الأيامِ العشرِ، فأكثِروا فيهنَّ من التهليلِ والتكبيرِ والتحميدِ
অর্থ: “জিলহজের প্রথম দশ দিন আল্লাহর কাছে সবচেয়ে মহান এবং এতে করা আমল সবচেয়ে প্রিয়। সুতরাং এ সময় বেশি বেশি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার, আলহামদুলিল্লাহ পড়ো।”
(তারতিবুল আমালি, হাদিস: ১৭৪৫)
অন্য হাদিসে এসেছে:
ما من أيامٍ أحبُّ إلى اللهِ أن يُتعبدَ له فيها من عشر ذي الحجةِ يعدلُ صيامُ كلِّ يومٍ منها بصيامِ سنةٍ وقيامُ كلِّ ليلةٍ منها بقيامِ ليلةِ القدرِ
অর্থ: “আল্লাহর কাছে জিলহজের প্রথম দশ দিনের ইবাদত সবচেয়ে প্রিয়। এ সময় প্রতিদিনের রোজা এক বছর রোজার সমান এবং প্রতিরাতের ইবাদত শবে কদরের রাতের ইবাদতের সমান।”
(তিরমিজি, হাদিস: ৭৫৮)
আরাফার দিনের রোজা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন:
صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ أَحْتَسِبُ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ وَالسَّنَةَ الَّتِي بَعْدَهُ
অর্থ: “আরাফার দিনের রোজা, আমি আল্লাহর কাছে আশা করি যে, তিনি এর দ্বারা পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।”
(তিরমিজি, হাদিস: ৭৪৯)
শুআবুল ঈমানে আছে:
صيامُ يومِ عرفةَ كصيامِ ألفِ يومٍ
অর্থ: “আরাফার দিনের রোজা হাজার দিনের রোজার সমান।”
(শুআবুল ঈমান, হাদিস: ৩৪৮৬)
অতিরিক্ত ফজিলতের আমল:
যারা কোরবানি করার নিয়ত রাখে, তাদের জন্য সুন্নত হলো জিলহজের চাঁদ দেখার পর থেকে পশু কোরবানি না হওয়া পর্যন্ত চুল, নখ ও দেহের লোম না কাটানো। হাদিসে এসেছে, এতে পূর্ণ কোরবানির সওয়াব পাওয়া যায়।
সুতরাং, এই দশ দিনের প্রতিটি মুহূর্ত কাজে লাগিয়ে বেশি বেশি ইবাদত, তওবা ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব।